April 24, 2024, 4:13 am
সর্বশেষ:
লোহাগাড়ার ইউএনও`র সাথে লোহাগাড়া সাংবাদিক সমিতির নব গঠিত কমিটির সৌজন্য সাক্ষাৎ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সেবা প্রদানে বান্দরবানে হেল্প ডেক্স উদ্বোধন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : শার্শায় তিন পদে ১১ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা শার্শায় ৬টি সোনারবার উদ্ধার, আটক ১ সোনারগাঁ বারদী বাজারের ৫০ টাকার খাজনা ৫০০ টাকা মোরেলগঞ্জে অগ্রনী ব্যাংকের পিএলসি নতুন ভবনের উদ্বোধন বাগআঁচড়া চাঁদাবাজির সময় গণধোলাইয়ের শিকার যুবক চট্টগ্রামে র‌্যাবের পাতা ফাঁদে আঁটকে গেল ৪ চাঁদাবাজ আমিরাতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ লোহাগাড়া সাংবাদিক সমিতির আত্মপ্রকাশ, সভাপতি জব্বার ফিরোজ, সম্পাদক জাহেদ

বহুমাত্রিক সমস্যায় করোনায় ফেরত আসা কুয়েত প্রবাসীরা

  • Last update: Sunday, May 2, 2021

জিসান মাহমুদঃ করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত ৬ মার্চ বাংলাদেশসহ ৭টি দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এরপর করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় ফ্লাইট আর চালু হয়নি। প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে ১৫ জুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কয়েকটি দেশের সঙ্গে বিশেষ ফ্লাইট চালু করে দেশটি। তবে সেটা শুধু কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে কুয়েত থেকে বাংলাদেশে যেতে পারবেন প্রবাসীরা।

১ আগস্ট সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ মোট ৩৪ দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কুয়েত। ১ অক্টোবর থেকে কুয়েতের বিমান সংস্থা জাজিরা এয়ারওয়েজের সরাসরি ফ্লাইট চালু হলেও সেটি ফের বন্ধ হয়ে যায়।

৪ অক্টোবর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুয়েত সফর করে আমির শেখ নওয়াফ আল আহমদ আল সাবাহ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আহমদ নাসেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কুয়েতের ফ্লাইট চালু ও দেশে ছুটিতে গিয়ে আটকেপড়া প্রবাসীদের ফিরিয়ে নিতে আহ্বান জানান।

করোনায় দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ৩৪ দেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু না হওয়ায় আকামার মেয়াদ থাকলে নিষিদ্ধ দেশের নাগরিকরা ৩৪ দেশ ব্যতীত অন্য কোনো দেশ হয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থেকে পিসিআর সনদ নিয়ে কুয়েতে প্রবেশ করতে কোনো বাধা নেই।

আর এতেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগ ডোবে কুয়েত আসা। কিন্তু অন্য দেশের নাগরিকরা এক লাখ টাকার মধ্যে দুবাই হয়ে কুয়েতে প্রবেশে করলেও বাংলাদেশিদের খরচ হচ্ছে দুই থেকে তিন লাখ টাকার মতো। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে শুধু তারাই আসছে যাদের খুব বেশি জরুরি।

২০২০ সালের শেষের দিকে যখন করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে তখন নিষিদ্ধ ৩৪ দেশের নাগরিকদের সরাসরি কুয়েতে প্রবেশের অনুমতি দিলেও ১৫ ডিসেম্বর হতে প্রথম ধাপে শুধুমাত্র ফিলিপাইনের নাগরিকরা এসে পৌঁছায়। এরপর ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও বারবার সেটা বাতিল হয়ে যায়।

২০২১ সালে ফেব্রুয়ারিতে যখন করোনার প্রকোপ আবার বেড়ে যায়, তখন ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় বিদেশিদের কুয়েত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর মধ্যে অনেকদিন ফ্লাইট চালু না হওয়ায় যাদের আকামা শেষ তারা কুয়েতে আর প্রবেশ করতে পারেনি।

যারা দুবাই হয়ে আসতে চাচ্ছে হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুবাইতে আটকা পড়ে গেছে অনেক প্রবাসী। কারো ২ মাস কারো ৩ মাস পার হয়ে গেলেও কুয়েতে আসা সম্ভব হয়নি। ফলে বিপাকে পড়েছে এসব প্রবাসী।

গত ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েত দুবাইতে থাকা প্রবাসীদের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয় ২৫ এপ্রিলের মাঝে বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েতের ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রেরণের জন্য। তবে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

দুবাই আটকেপড়া কুয়েত প্রবাসী মোহাম্মদ মামুন বলেন, আমি ৩ মাস ধরে দুবাই আটকা পড়ে আছি। হোটেল বুকিংসহ এখানে অনেক খরচ। টাকা-পয়সা শেষ হয়ে আসছে। অনেকটা ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে এখন। এভাবে চললে বেশিদিন থাকতে পারব না এখানে। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকে আবার অর্থ কষ্টে ফিরছেন বাংলাদেশে।

দুবাইতে আটকেপড়া আরেক প্রবাসী ইলিয়াস খান বলেন, আমি দুবাই এসেছি ৩ মাস হলো। আমার সাথে আরো অনেকে আছে। আমরা এখানে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের কারো কারো আকামা শেষের পথে। আমাদেরকে যে কোনোভাবে কুয়েত নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

ছুটিতে বা করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশে এসে আটকেপড়া প্রবাসী কর্মীরা আবার কবে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আর কাটছেই না। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট চালু হলেও কুয়েতের সাথে যেন নয় ছয় খেলা খেলছে।

বারবার চালু হওয়ার কথা থাকলেও চালু হয় না। তবে আকামা থাকলে ২০ নম্বর খাদেম গৃহকর্মীদের বালসালামা প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করে সরাসরি কুয়েতে প্রবেশে কোনো বাধা নেই। যাদের ভিসা ও আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা তো নিশ্চিত হয়ে গেছে কুয়েত প্রবেশ করতে পারবেন না, কিন্তু যাদের ভিসা ও আকামার মেয়াদ এখনো আছে তাদের প্রবেশের ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এদেরই একজন ছুটিতে থাকা মেহেরাজ হোসাইন। গত বছর ছুটি নিয়ে দেশে যাওয়ার পর মহামারির মধ্যে বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ায় আর ফিরতে পারেননি তিনি। অতিরিক্ত খরচে রিস্ক নিয়ে ডুবাই হয়ে আসতে হয় বিধায় সেটাও করেন নাই। আকামার মেয়াদ আর কিছুদিন আছে। সেটা শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাবে। এখন বিভিন্ন দেশে বিমান চলাচল শুরু হওয়ায় তিনিও নিজের কর্মস্থলে ফিরে আসতে চান।

আরেক প্রবাসী নিজাম উদ্দিন মাসুদ বলেন, করোনার পূর্বে দেশে এসেছি। বারবার ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা শুনে খুশি হয়েছি। কিন্তু পুনরায় বন্ধ হওয়ায় ফিরতে পারিনি। বাংলাদেশ দূতাবাস অনেকবার তথ্য চেয়েছেন এবং তাদেরকে তথ্য দেয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত আটকেপড়া প্রবাসীদের কোনো সুফল দূতাবাস দিতে পারেনি।

অন্যদিকে রিয়াজুল ইসলাম নামে এক প্রবাসী কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি ২০ সালের জানুয়ারিতে দেশে আসছিলাম। আসার পর ফ্লাইটের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আর কুয়েত যেতে পারিনি। এখন দেশে অনেক কষ্টে আছি। সরকারের উচিৎ আমাদের দিকে সুনজর দেয়া।

এভাবে অসংখ্য প্রবাসী দেশে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউ কেউ দুবাই হয়ে কিংবা বিশেষ ফ্লাইটে ফিরতে পারলেও অধিকাংশ প্রবাসী ফিরতে পারেনি। তাই এসব প্রবাসীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। চাইলে ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়া যায়। ফেরত আসা দক্ষ লোকজনকে দেশের ভেতরেই চাকরি দেয়া যায়।

সংকটময় এই সময়ে রাষ্ট্রসহ সবার প্রবাসীদের পাশে থাকাটা জরুরি। কারণ ১ কোটিরও বেশি প্রবাসী রাষ্ট্রকে শুধু দিয়েই যাচ্ছেন। যাদের রেমিট্যান্স না থাকলে বাংলাদেশ কখনো এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতো না। সেই তুলনায় তাদের প্রাপ্তি নেই বললেই চলে। করোনার এই সংকটময় সময়ে পাশে থেকে ঋণশোধ করার চেষ্টা করতে পারে বাংলাদেশ।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC