প্রবাস ছেড়ে মাটির টানে কৃষিতে সাফল্যের যাত্রায়-রাসেল

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ব্যবসায় একের পর এক ব্যর্থতা, লোকসানের ঘানি আর অনিশ্চয়তার দোলাচল—সবকিছু একসময় তাকে ঘিরে ফেলেছিল। কিন্তু হার মানেনি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের সালাউর রহমান রাসেল। প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে নানা উদ্যোগে জড়ালেও যখন আশানুরূপ সাফল্য মিলেনি, তখনই তিনি নিলেন ভিন্ন এক সিদ্ধান্ত—ফিরে গেলেন মাটির কাছে, কৃষির পথে। আর এই সিদ্ধান্তই বদলে দিল তার জীবনের গতিপথ।

উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের বালিগাঁও গ্রামের এই প্রবাস ফেরত যুবক ২০১৯ সালে কাতার থেকে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে করোনা মহামারির কারণে আর বিদেশে যেতে পারেননি। জীবিকা ও অবস্থান জোরদার করতে তিনি প্রায় এক বছর মুদি দোকানের ব্যবসা চালান। কিন্তু ধারাবাহিক লোকসানে হতাশায় ফেলে দেয়।

ব্যবসায় ব্যর্থতার পরও থেমে থাকেনি রাসেল। ছোট ভাইদের ব্যবসায় সময় দেওয়ার পাশাপাশি মনের ভিতরে জমতে থাকে নতুন এক চিন্তা—“ব্যবসা চলুক, কিন্তু আমি একজন দক্ষ কৃষক হবো।” ঠিক সেই ভাবনা থেকেই বাড়ির সামনের খালি জায়গায় শুরু করেন সবজি চাষ। প্রথম পরীক্ষামূলক চাষেই মিলল ইতিবাচক ফল। আর সেখান থেকেই তার কৃষিযাত্রার নতুন অধ্যায়।

রাসেল বলেন,“প্রবাসে ভালো আয় ছিল। দেশে এসে ব্যবসা করেও কিছুতেই লাভ হচ্ছিল না। তারপর কৃষির দিকে মন দিই। বুঝে গেলাম—এই মাটিই আমার শক্তি, আমার ভবিষ্যৎ। চাই তরুণরা কৃষিকে পেশা হিসেবে নিক। এতে আত্মনির্ভর হওয়া যায়, ভুল হয় না।”

এখন তার প্রতিটি দিন কাটে মাঠে–মাটিতে, গবেষণায়–পরীক্ষায়। নতুন চাষপদ্ধতি, কৃষি প্রযুক্তি, বাজারব্যবস্থা—সবকিছু নিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন তিনি। এক সময়ের প্রবাসী রাসেল এখন দৃঢ়ভাবে জানান, আর বিদেশ নয়; দেশের মাটিতেই তার স্বপ্ন, পরিকল্পনা ও আগামীর পথচলা।

গ্রামবাসীরা জানান, রাসেলের পরিশ্রমই তাদের সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষিখেতে কাজই তার নিত্যদিনের সঙ্গী। নিজের কাজের পাশাপাশি অন্যদেরও চাষাবাদে উৎসাহ এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি। তাদের ভাষায়,“রাসেলের শ্রম আমাদেরও সাহস দেয়। সে সাহায্যপ্রবণ,কর্মঠ এবং সত্যিকারের মাটির মানুষ।”

রাসেলের শৈশবের বন্ধু ও মৌলভীবাজার জেলা গণমাধ্যমকর্মী তুহিন জুবায়ের বলেন,
“রাসেল ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী। তবে কৃষির প্রতি এতো গভীর আগ্রহ দেখাবে—এটা সত্যিই অবাক করেছে। তাকে দেখে আমিও কৃষিকাজে আগ্রহী হয়েছি। নিজের লাগানো গাছ বড় হতে দেখার আনন্দ সত্যিই অপরিমেয়।”

কৃষিকাজের প্রতিটি ধাপ, অভিজ্ঞতা ও সফলতার গল্প নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন রাসেল। তার এসব পোস্ট দেখে অনেক তরুণই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, আগ্রহী হচ্ছেন কৃষিভিত্তিক উদ্যোক্তা হতে।

উদ্যোক্তা হিসেবে আরও দক্ষ ও সুসংগঠিত হতে প্রতিদিন নতুন জ্ঞান অর্জন করছেন তিনি। স্বপ্ন দেখছেন কৃষিনির্ভর টেকসই ভবিষ্যতের, যেখানে একজন নিবেদিতপ্রাণ কৃষক হিসেবে নিজের অবস্থান আরও শক্ত করতে চান।

মাটির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছেদ্য। সেই সম্পর্ক থেকে শক্তি খুঁজে পেয়েছেন সালাউর রহমান রাসেল। একসময়ের প্রবাসী আজ হয়ে উঠছেন গ্রামবাংলার উদীয়মান কৃষি উদ্যোক্তা—নিজের সাফল্যে যিনি অনুপ্রাণিত করছেন আরও অসংখ্য তরুণকে।

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *