তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: ভরা আমন মৌসুমে মাজরা পোকার আক্রমণে প্রতিবছর ক্ষতির মুখে পড়তেন মৌলভীবাজারের কৃষকেরা। তবে এখন সেই চিত্র বদলে যাচ্ছে। ক্ষতিকর পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে কৃষকেরা ঝুঁকছেন পরিবেশবান্ধব ‘পাচিং’ বা ‘ডেথ পাচিং’ পদ্ধতির দিকে। বাঁশের খুঁটি ও গাছের ডাল ব্যবহার করে সহজলভ্য এই কৌশলে শিকারি পাখিরা ধানক্ষেতে এসে পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে কীটনাশক ব্যবহারের খরচ কমছে, ফসল থাকছে সুরক্ষিত, আর পরিবেশও রয়ে যাচ্ছে দূষণমুক্ত।
প্রকৃতির সহায়তায় কৃষির এই রক্ষাকবচ ‘পাচিং’ পদ্ধতিতে ধানখেতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বাঁশের খুঁটি বা গাছের ডাল পুঁতে দেওয়া হয়। খুঁটির মাথায় খড় বা শুকনো ডাল বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে পাখিরা এসে বসতে পারে। এসব পাখির মধ্যে শালিক, ফিঙে, দোয়েল ও বাবুই প্রধান, যারা ধানগাছের ক্ষতিকর মাজরা পোকার ডিম ও লার্ভা খেয়ে ফেলে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে কীটপতঙ্গের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে, ধানগাছ সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে এবং ফলনও ভালো হয়।
কৃষকদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার মিয়া বলেন, “আমি কয়েক বছর ধরে পাচিং ব্যবহার করছি। আগের মতো আর মাজরা পোকার আক্রমণ হয় না। এবারও জমিতে ৩০টি পাচিং দিয়েছি। এতে খরচও কমেছে, ধানের ফলনও ভালো হয়েছে।”
জেলার রাজনগর উপজেলার কৃষক নূরুল ইসলাম জানান, “আগে প্রতি মৌসুমে কীটনাশকে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হতো। এখন পাচিং ব্যবহারে সেই খরচ অর্ধেকে নেমে এসেছে। পাখিরা দিনভর ধানক্ষেতে বসে পোকা খেয়ে ফেলে, ফলে মনে হয় তারা যেন প্রাকৃতিক পাহারাদার হিসেবে কাজ করছে।”
