বাসুদেব বিশ্বাস, বান্দরববান: বান্দরবানের রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
৫ এপ্রিল(শুক্রবার) সকাল ১১টার দিকে বান্দরবান শহরের মেঘলা এলাকায় অবস্থিত পার্বত্য জেলা পরিষদ সন্মেলন কক্ষে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পক্ষ থেকে সংবাদ সন্মেলনে একথা বলেন, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও হামলার ঘটনাটি মূলত টাকা লুট ও কেএনএফের সক্ষমতা জানান দিতে কেএনএফ করেছিল। রুমা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রও গোলা উদ্ধার করা না গেলেও র্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ সকলের প্রচেষ্টায় ঝুঁকি না নিয়ে তাদের কয়েকটি কৌশলের একটি ব্যাবহার করে অপহরণের শিকার ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বান্দরবানে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। তাদের মধ্যে শ্রেষ্টতা, উত্তরসুরিদের অনুপ্রেরণা ও বহিরবিশ্বে তাদের সহযোগীদেরকে সংগঠনটির সক্ষমতা জানান দিতেই রুমা-থানচিতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে (কেএনএফ) সশস্ত্র সদস্যরা। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান ও পুলিশ পক্ষ থেকে মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে র্যাবের হেফাজতে থাকা রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে গনমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হয় এবং তাকে নিরাপদে উদ্ধার করতে পারায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নেজাম উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এসময় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, লে.কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বিপিএম, পিপিএম, পিএসসিসহ র্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ও জেলায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্ল্যেখ্য, সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়।
অপহরণের প্রায় দুদিন পর গতকাল ৪ এপ্রিল(বৃহস্পতিবার) কেএনএফ এর সাথে র্যাবের মধ্যস্থতায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে রুমা থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে রাতে র্যাবের বান্দরবান ক্যাম্পে নেওয়া হয় এর আগে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে মুক্তি দিতে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে কেএনএফ।
জানা গেছে, রুমার সোনালী ব্যাংকের আশপাশ থেকেই বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি শারীরিক ভাবে সুস্থ আছেন। তবে তাকে উদ্ধারে মুক্তিপন দেওয়া হয়েছে কিনা এই বিষয়ে র্যাব নিশ্চিত করেনি।
র্যাব জানায়, কেএনএফের আর্থিক সংকট চলছিল, তা আগে থেকেই কয়েকটি সংস্থাকে জানানো হয়েছিল। এ সংকট দূর করার জন্যই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। গত রাতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম বলেন, তাকে কোন ধরণের শরিরীক নির্যাতন করা হয়নি, ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম সুস্থ আছেন।
এদিকে ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারের পর আবারও থানচির সোনালী ব্যাংক শাখা ও বাজারে হামলা চালায় শতাধিক কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্য। সেখানে পুলিশের সঙ্গে কেএনএফ এর ঘন্টাব্যাপি থেমে থেমে গোলাগুলি চলে বলে জানান, বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জুনায়েদ জাহেদী।
গত ২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাত ৮টার দিকে তারাবির নামাজ চলাকালে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় হামলা চালায় সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। সোনালী ব্যাংকের শাখায় ঢুকে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা ব্যাংকে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ১৪টি অস্ত্রও লুট করে। একইসঙ্গে মসজিদ থেকে রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
থানচির উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমা বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা দিকে থানচির সোনালী ব্যাংক, বাজারের আশেপাশে প্রচুর গুলি বিনিময় হয়। থানচি বাজারের পেছনের শাহজাহান পাড়ার দিক থেকে দফায় দফায় গুলির শব্দ ভেসে আসে। থানচি বাজারে গুলি করার কারনে বাজারের ব্যাবসায়ি ও স্থানীয়রা সাঙ্গু নদীর পাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়।
প্রসঙ্গত, একের পর এক কেএনএফ এর সশস্ত্র হামলার কারনে বান্দরবানে ৭টি উপজেলায় বসবাসরত মানুষের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে ব্যবসা বাণিজ্যে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।