নিখোঁজের ছয় বছর পর ফেনীর ছাগলনাইয়ায় উদ্ধার কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ

তিমির বণিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
ফেনীর ছাগলনাইয়ায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের পর পকেটে থাকা একটি ব্যাংক চেকের সূত্র ধরে উদ্ঘাটিত হয়েছে ছয় বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক কাস্টমস কর্মকর্তার করুণ পরিণতি। শনাক্ত হওয়া মরদেহটি চট্টগ্রাম থেকে ২০১৯ সালে অপহৃত কাস্টমস কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ (৪৬)-এর।

পরিবারের দাবি, অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা প্রদান করলেও তাকে আর ফেরত পাননি তারা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে অচেতন অবস্থায় এক ব্যক্তিকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ছাগলনাইয়া থানার ওসি মো. আবুল বাশার এর নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করতে গিয়ে পুলিশ তার পকেটে থাকা কাগজপত্রের মধ্যে উত্তরা ব্যাংক, ফেনীর বিরিঞ্চি শাখার একটি চেক পায়। চেকে থাকা হিসাবের নাম ছিল আব্দুল আহাদ। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে।

ওসি আবুল বাশার জানান, ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী নিহত আব্দুল আহাদ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের ইমানী মিয়ার ছেলে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন—ফেনীতে ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্দেশ্য কী ছিল, এবং তিনি কীভাবে সেখানে এলেন।

নিহতের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন মনি বলেন, “আমার ভাই একসময় সিলেটের ব্রিটানিকা উইমেন্স কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। পরে তিনি কাস্টমস অডিটর পদে যোগ দিয়ে সিলেট, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের ১ মে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একটি অচেনা নম্বর থেকে কল দিয়ে জানানো হয়, আহাদ ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে বিকাশে দুই লাখ টাকা পাঠাতে হবে। আমরা টাকা পাঠালেও এরপর আর কোনো যোগাযোগ পাইনি।”

তিনি আরও বলেন, “থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করার পরও ছয় বছর ধরে তার কোনো সন্ধান পাইনি। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আমার ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।”

নিহতের ভাগিনা মোস্তাফিজুর রহমান সাকিফ বলেন, “আমার মামার দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ছোট মেয়ে গর্ভে থাকাকালীন তিনি নিখোঁজ হন। মামার নিখোঁজের শোকে আমার নানা-নানি মারা যান। এত বছর ধরে আমরা তার কোনো খবর পাইনি। এমন মৃত্যুকে আমরা রহস্যজনক বলে মনে করি।”

নিহতের স্ত্রী মাহবুবা আক্তার সুমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে আহাদের বড় ভাই আব্দুল নূর মরদেহ বুঝে নিতে মৌলভীবাজার থেকে ফেনীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে জানান বোন নাঈমা নাসরিন মনি।

এ বিষয়ে ছাগলনাইয়া থানার উপপরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, “নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *