গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আজ সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ড. ইউনূসসহ ৪ জনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে একটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা এবং আরেকটি ধারায় ৫ হাজার টাকা মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ সময় ড. ইউনূস আপিল শর্তে জামিন চাইলে আদালত তাকে ১ মাসের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। ৫ হাজার টাকার বন্ডে সেটি স্বাক্ষর করা হয়েছে। মামলায় ড. ইউনূস ছাড়াও যে ৩ জনের রায় ঘোষণা করা হয়েছে তারা হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম এবং আরেক পরিচালক মো. শাহজাহান।
এর আগে মামলার রায় শুনতে দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে আদালতের এজলাসে হাজির হন ড. ইউনূস। এ সময় তার আইনজীবীরাও সঙ্গে ছিলেন। আলোচিত এ রায়কে ঘিরে আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
রায়ের শুরুতেই মামলা চলাকালীন সাক্ষীর জালিয়াতি নিয়ে ড. ইউনূসের করা ২টি আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। এ সময় আদালত বলেন, ড. ইউনূসকে নোবেল বিজয়ী হিসেবে নয়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
মূলত নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করা এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছিল। ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
মামলায় গত ৬ জুন ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এই অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যরা। গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
মামলায় মূলত অভিযোগ আনা হয় যে, শ্রম আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি দেয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেয়া হয় না।
এছাড়া গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেয়া হয় না বলেও অভিযোগ করা হয়।
গত ২২ আগস্ট ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় শ্রম আদালতে, শেষ হয় ৯ নভেম্বর। এতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন।
অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ৯ নভেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজন বিবাদী লিখিতভাবে আদালতকে বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেয়া হয়ে থাকে। মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তারা।
আদালতে দেয়া লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়, সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোতে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।