March 29, 2024, 1:44 pm

ডায়াবিটিসে কী কী খাবার কীভাবে খেতে হবে

  • Last update: Friday, October 30, 2020

ডায়াবিটিস হলে মিষ্টি তো বটেই, ভাত–আলুও চলে যায় না-এর খাতায়।হাজির হয় ‘সুপার ফুড’।করোলা–লাউয়ের রস, মেথি ভেজানো জল, কাঁচা হলুদ-সহ রাজ্যের শাক–সব্জি।সরবত, ঠান্ডা পানীয়ের জায়গা নেয় আমলা–অ্যালোভেরা জুস।

মাছ–মাংসের হালও তথৈবচ।রেড মিটের প্রশ্ন নেই।একটা ডিম খেতে হলেও হাজার প্রশ্ন। তৈলাক্ত মাছে হাই ক্যালোরি, তাই সেও প্রায় ব্রাত্য।

সে তাহলে খাবে কী? ডায়াবেটিক ডায়েট? কিন্তু বিজ্ঞানীরা যে বলছেন ডায়াবেটিক ডায়েট বলে কিছু হয় না। ডায়াবিটিস হলেও বিজ্ঞানীরা সাধারণ সুষম খাবার খেতে বলেন, যা এমনিই আমাদের খাওয়ার কথা, যাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট আছে মাপমতো, যে খাবারে নিষিদ্ধ কিছুই নেই।

হরমোন বিশেষজ্ঞ সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় যেমন ঘন ঘন অনিয়ম করলেও খুব ক্ষতি নেই, এ ক্ষেত্রে ততটা করা যায় না, বলাই বাহুল্য। কেউ যদি আলু খেতে চান, তাতে আপত্তি নেই।

আলু খেতে পারেন ডায়াবিটিসে?

সতীনাথের কথায়, ‘‘চাল–গমের মতো আলুও তো স্টার্চ।তাহলে ডায়াবিটিস হলে যদি ভাত–রুটি ব্রাত্য না হয়, আলু হবে কেন? বিশেষ করে যেখানে ১০০ গ্রাম চাল–গমে আছে ৩৪০ ক্যালোরি আর আলুতে ১০০ ক্যালোরি। এ ছাড়া আলুতে আছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমিয়ে ডায়াবেটিকদের উপকার করে।যদিও আলুর গ্লাইসিমিক ইনডেক্স (জিআই) বেশি।অর্থাৎ রক্তে চট করে সুগার বাড়িয়ে দেয়।কিন্তু খোসাসমেত খেলে ও সঙ্গে অন্য শাক–সব্জি মিশিয়ে নিলে ফাইবারের দৌলতে পুরো খাবারের জিআই কমে যায়।তখন তা নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়।’’

পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা মিশ্র বলেন, ‘’আলু ভাজা নয়।খেতে হবে সেদ্ধ করে বা তরকারি দিয়ে।আবার স্রেফ আলু–ভাতে না খেয়ে আলু–উচ্ছে, আলু–পটল বা আলু–বেগুন ভাতে খেলে পুষ্টি যেমন বেশি পাবেন, চট করে সুগারও বাড়বে না।আর কোনও দিন যদি আলু সেদ্ধ বা আলুর তরকারি খাওয়ার প্ল্যান থাকে, সে দিন ভাত–রুটি একটু কম খেলেই ঝামেলা মিটে যাবে।’’

ফাইবারসমৃদ্ধ সুষম খাবার খেতে হবে

যদিও অনেকে ভাবেন, ডায়াবিটিস হলে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট কমিয়ে খেতে হয় প্রচুর প্রোটিন, ব্যাপারটা তা নয়।মোট ক্যালোরির ৫০ শতাংশের বেশি কার্ব থেকে না এলেই হল এবং তা যেন ফাইবারসমৃদ্ধ হয়।তাই ময়দার বদলে হোল-গ্রেইন আটা, সাদা চালের বদলে ব্রাউন বা ওয়াইল্ড রাইস, সাদা পাউরুটির বদলে ব্রাউন ব্রেড, ফলের রসের বদলে গোটা ফল খেতে বলা হয়।সবজি, ডাল খেতে হয় খোসাসমেত।সবজি ও ফল দিনে ১০০ গ্রামের মতো খাওয়া দরকার।আম–কলাও মাঝেমধ্যে দু–এক টুকরো খাওয়া যায়।মিষ্টিও ন–মাসে ছ–মাসে খেতে পারেন।তবে ভরা পেটে, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে।

কিডনি ঠিক থাকলে প্রতি কেজি ওজনের জন্য এক গ্রামের হিসেবে খান।ডিমের কুসুম বাদ দিতে হবে না, গোটা ডিম খান রোজ।মাছ খান দিনে ১০০ গ্রামের মতো।চিকেন ব্রেস্ট পিস খেতে পারেন।রেড মিট বাদ দিতে হবে না।মাংসের কম চর্বিওলা অংশ মাসে দু-মাসে এক-আধবার খেতে পারেন।

পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল জানান, ‘‘ফ্যাট কম খেলেও ভাল ফ্যাটে যেন কার্পণ্য না হয়।কাঠবাদাম বা আমন্ড, আখরোট, তিসি, সূর্যমুখীর ও চালকুমড়োর বীজ, অ্যাভোক্যাডো, অলিভ অয়েল অল্প করে খান।ফ্যাটযুক্ত দুধ (ফুল ক্রিম মিল্ক) খান।সামুদ্রিক মাছ খান সপ্তাহে দু–তিন দিন।তেলের মধ্যে সর্ষে, সূর্যমুখী, বাদাম, অলিভ, রাইসব্রান, সবই ভাল।একেক রান্নায় একেকটা ব্যবহার করুন।তবে দিনে ৩ চা–চামচের বেশি যেন না হয়।ট্র্রান্স ফ্যাট, অর্থাৎ বনস্পতি, মার্জারিন, ভাজা ও প্রসেসড খাবার বাদ দিতে হবে।স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরপুর ঘি–মাখনও যত কম হয় তত ভাল।’’

সুপার ফুডের ভূমিকা

সতীনাথ এও বলেন, ‘‘সুপার ফুড অর্থাৎ আমলকি, রসুন, পালং, মেথি, টোম্যাটো, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, অ্যামন্ড, করোলা, কাঁচা হলুদ ইত্যাদি ইচ্ছে হলে খেতেই পারেন।তবে নিয়ম মেনে।যেমন-মেথি ভেজানো জল নয়, খান মেথির গুঁড়ো।লাউ–করোলার রস না খেয়ে রান্না করে খান।প্যাকেটের আমলকি বা আমলকির রসের বদলে কাঁচা বা সেদ্ধ আমলকি খান।কাঁচা হলুদ খেতে পারেন।রান্নাতে দিলেও ভাল, যদি তা ঘরে বাটা হয়।রসুনও কাঁচা বা রান্নায় দিয়ে খান।

বাজারের প্যাকেটজাত পেস্ট (আদা-রসুন) ইত্যাদি ব্যবহার না করাই ভাল।এর কোনওটাই কিন্তু ওষুধের বিকল্প নয়।’’

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC