ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বীকার করেছেন যে, গত বছরের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনী ‘‘অবশ্যই ভুল’’ করেছে। এ কথা তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’কে দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে বলেছেন; খবর এসেছে আউটলুক ইন্ডিয়া থেকে।
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের এম্বেসি অঞ্চলে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কিনা সে বিষয়ে তিনি সন্দিহান। যদি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয় আর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকলে সেটি পূর্ণ বৈধ মনে হবে না—তাই তিনি নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তথাপিও তিনি ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আহ্বান উপেক্ষার সমালোচনা করেছেন; তবে ভোট বয়কটের ডাক তিনি দেননি এবং সহিংস আন্দোলনের বিরোধীতাও গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন।
শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, ‘‘নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত পরিবর্তনশীল ও সহিংস পরিস্থিতিতে সাড়া দিচ্ছিল—কিন্তু তাদের কিছু পদক্ষেপ অবশ্যই ভুল ছিল। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তগুলো ছিল আনুপাতিক ও সৎ বিশ্বাসে নেওয়া, এবং প্রাণহানি কমানোর উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছিল।’’

জাতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) তার বিরুদ্ধে ও তার সরকারের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার প্রস্তুতি চলাকালীন এসব মন্তব্য করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের সহযোগীদের বিচার করে এই ট্রাইব্যুনাল পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন—এ কথাও সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন।
আইসিটি-র বিচারপ্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো আমার রাজনৈতিক শত্রুদের নিয়ন্ত্রিত একটি ভুয়া ট্রাইব্যুনাল, যার লক্ষ্য আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা। রায় পূর্ব নির্ধারিত—আমি অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করি।’’ এরপরও তিনি যোগ করেছেন যে স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত আদালতের সামনে দাঁড়াতে তিনি ভয় পান না।
প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে রাষ্ট্রপতির নিকট একটি লিখিত চিঠি জমা দিতে হয়—আমি কখনও এমন কোনো চিঠিতে স্বাক্ষর করিনি এবং রাষ্ট্রপতিও কোনো চিঠি গ্রহণ করেননি।’’
পাকিস্তানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক প্রসঙ্গেও তিনি মন্তব্য করেছেন—১৯৭১ সালের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, বাংলাদেশি জনগণ পাকিস্তানের সেনাশাসনের নৃশংসতা ভুলবে না। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক বলা যেতে পারে, তবে তা ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া উচিত; আমাদের প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভারতের সাথেই।’’
শেখ হাসিনা সমাপনী বক্তব্যে পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ইউনূস সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় এবং তারা নির্বাচিত নয়—তাই তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতার দায়বদ্ধতা নেই। তিনি সতর্ক করেছেন যে ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ নয়, বরং নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এখন প্রধান বিষয়।
