জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই।”

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা নির্বাচন করব এবং নির্বাচন করতে চাই। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণাটি দিয়েছেন, আমরা সেই ঘোষণার সঙ্গে একমত হয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন বানচাল ও বিলম্বিত করার জন্য একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্নভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এখন আর নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে—এটি আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি। সেদিন দুটি ব্যালট থাকবে—একটি গণভোটের জন্য, অন্যটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। সুতরাং এই বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়।”

জনগণ নির্বাচন চায়

গণভোটের দাবিতে আন্দোলনরত দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যারা এখন এ নিয়ে গোলমাল করছেন, রাস্তায় নেমেছেন—তাদের অনুরোধ করব, দয়া করে জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। অতীতে অনেকবার করেছেন, এবার তা থেকে বিরত থাকুন।”

তিনি বলেন, “এক সময় এ দেশের মানুষের একমাত্র চাওয়া ছিল স্বাধীনতা। কিন্তু আপনারা (জামায়াতে ইসলামী) সেই স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। আজ জনগণ নির্বাচন চায়—আপনারা দয়া করে সেই নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন না। ইতিহাসে যারা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, জনগণ কখনো তাদের ক্ষমা করে না।”

বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আমাদের মিত্রদের নিয়ে—যাদের সঙ্গে গত ১৭ বছর ধরে লড়াই-সংগ্রাম করে এসেছি—তাদের সঙ্গে নিয়েই সরকার গঠন করতে চাই। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, নির্বাচনের পর আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। তাই আসুন, সবাই মিলে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাই এবং একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন সম্পন্ন করে জনগণের সংসদ ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।”

সভায় তিনি জেএসডির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আ স ম আবদুর রবের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন।

সংস্কার আমরা করেছি, আমরাই করব

দলের বিরুদ্ধে সংস্কারবিরোধী অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশে যত সংস্কার হয়েছে, সব বিএনপির হাত দিয়েই হয়েছে। আমরাই সংস্কারের জন্য ৩১ দফা দিয়েছি। আমরাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল সংস্কারের জন্য সনদে স্বাক্ষর করেছি। আমরা যেসব সংস্কারে একমত হয়েছি, সেগুলো আমরা ক্ষমতায় এসে বাস্তবায়ন করব। যেগুলো এখনো করা সম্ভব হয়নি, সেগুলো আমাদের ইশতেহারে যুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে।”

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভা ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জেএসডির ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব।

আলোচনায় আরও অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *