March 29, 2024, 6:44 am

ছেলেদের জমি লিখে দিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন বাবা

  • Last update: Sunday, April 25, 2021

তার বয়স শত বছর ছুঁইছুঁই। জীবনের চাকা সচল রাখতে এ বয়সেও রিকশা প্যাডেল মারছেন নূরী। কংকালসার ঘামঝরা শরীরে কুঁজো হয়ে জামালপুর শহরের অলিতে গলিতে রিকশা চালান তিনি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় তার রিকশায় উঠতে চায় না কেউ।তাই তেমন আয়-রোজগারও নেই।

মানুষের বাজার সদাই বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যা পাওয়া যায় তা দিয়েই কোনো মতে দুই সদস্যের সংসার চলছে।শহরের তমালতলা পিলখানা এলাকায় সরকারি জমিতে ঘর তুলে থেকেছেন ১০ বছর।

পাথালিয়ায় ছিল ১২ শতাংশ জমি। ছেলেদের লিখে দিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব। ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ৩ ছেলের মধ্যে দুই জন জমি বিক্রি করে চলে গেছে অন্যত্র। মেঝো ছেলের বাড়িতে দু চালা ভাঙা বেড়ার ঘরে এখন তিনি অনেকটা আশ্রিতের মতো।

ছোট ছেলেরও ৫ সদস্যের পরিবার। নূরীর ভরনপোষণের যোগান দিতে পারেন না তিনি। বাধ্য হয়ে তাই রিকশা চালাতে হয়। মৃ”ত ময়েজ উদ্দিন শেখের ছেলে অতিশীপরবৃদ্ধ নূরী বর্তমানে বসবাস করছেন শহরের পাথালিয়া গ্রামে মেঝো ছেলে কালুর ভিটায়। মেঝো ছেলেরও অটোবাইক চালিয়ে ৫ জনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বাবা ও সৎ মাকে দেখাশোনা করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।

ছেলে বেলাতেই নূরী জীবন যুদ্ধ শুরু করেছিলের কুলির কাজ করে। পেটের দায়ে খড়ি, তুষ বেচে, রিকশা চালিয়ে নানা কায়িক শ্রমের পেশায় নিয়োজিত থেকে ৫৫ শতাংশ বসতভিটা ও ১০ পাখি কৃষি জমি কিনেছিলেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে সুখেই কাটছিল সংসার। ছেলেদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন জমি বিক্রি করে। অবশিষ্ট ছিল ১২ শতাংশ বসতভিটা। সেটুকুও ছেলেদের লিখে দিয়ে এখন তিনি সর্বস্বান্ত। এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে চোখ মুছতে মুছতে নূরী জানালেন তার কষ্টমাখা জীবনের গল্প।

জীবনের গতির মতো কমে গেছে নূরীর রিকশার চাকা। রিকশায় যাত্রী নিয়ে গান গেয়ে শহরের অলি-গলিতে ঘুরে বেড়ানো এক সময়কার প্রাণচঞ্চল নূরীকে চোখে পড়ে না। একদিন রিকশা চালালে দুদিনই জীবনগাড়ি নিয়ে ঘরে পড়ে থাকতে হয়। তবুও হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে রিকশা বাইতে হচ্ছে জীবনের ঘানি টানতে। তার বৃদ্ধ বয়সে কুঁজো হয়ে রিকশা টানার দৃশ্য দেখে শহরের পথেঘাটে চলাচলরত পথচারীরাও আফসোস করে।নূরী বলেন, আমার সব আছিলো। খুব কষ্ট কইরা জমি জিরেত করছিলেম।

তিনডা পুরির (মেয়ে) বিয়ে দিয়ে এডা পুলারে নেহাপড়া করাইয়ে জমিজিরেত শেষ অইছে। বাড়ি ভিঠের এট্টু জমি আছিলো তাও পুলারা নেইখে নিছে। এহন কেউ আমারে ভাত-কাফর দেয় না। বাহি দিন কিবেই কাটবো হেই চিন্তায় চোহে মুহে আন্ধার দেহি গো বাজান।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC