March 29, 2024, 9:15 pm

ছাত্রলীগের সভাপতিকে নিজ উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণার হুশিয়ারি

  • Last update: Wednesday, September 8, 2021

১৬ বছর পর গ্রামে ফেরা মুক্তিযোদ্ধাকে বাজার থেকে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এমনকি ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রশ্নবিদ্ধ কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

সোমবার বিকালে মারধরের শিকার মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার ও আজহার মনুর বিচার চেয়ে কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের পর অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন নেতারা। নির্যাতনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. মজিদ সরদার (৭২) ও তার সঙ্গে থাকা আজাহার ওরফে মনু (৬৫) বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত রোববার রাতে বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর (আগরপুর) ইউনিয়নের ঠাকুরমল্লিক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, মারধরের শিকার দুজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বরিশাল হাসপাতালে পাঠানো হয়। একদিন পার হয়ে গেলেও এ ব্যাপারে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। জানা গেছে, ২০০৫ সালে ১৫ এপ্রিল ভোর রাতে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি (তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান) খালেদ হোসেন সরদার স্বপনের বাবা আবুল কাসেম সরদার খুন হন। সেই মামলায় মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার আসামি ছিলেন। ওই মামলায় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালত মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদারসহ ১০ আসামির যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ দেন। পরে ওই মামলায় মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার খালাস পাওয়ার দীর্ঘ ১৬ বছর পর গত রোববার সন্ধ্যার পরে মজিদ সরদার নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন।

হামলার শিকার মুক্তিযোদ্ধা আ. মজিদ সরদার বলেন, আজাহার মনুকে সঙ্গে নিয়ে আগরপুর ইউনিয়নের নিজ পিত্রালয় সরদার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কামরুল কবিরাজের চায়ের দোকানের সামনে পৌঁছলে তাদেরকে আটক করে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেকের অনুসারীরা। সেখানে মারধর করে দুজনকে ধরে নিয়ে যায় তারেকের বাড়িতে। তারেক বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদ হোসেন সরদার স্বপনের ভাই। মজিদ বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান তারেক নিজে তার বাম হাতের আঙুল হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দিয়েছেন। কুপিয়ে বাম পায়ের হাঁটুর নিচে মারাত্মক জখম করেছেন। মারধরের একপর্যায়ে খবর পেয়ে মাঝরাতে আগরপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে আহতাবস্থায় তারেক চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আহত আজাহার বলেন, বাজারে মারধরের পর আমাদের ধরে নিয়ে যায় চেয়ারম্যানের বাড়িতে। সেখানে চেয়ারের সাথে বেঁধে হাত-পায়ের নখসহ আঙুল প্লাস দিয়ে থেঁতলে দেয়। তারা দুই ঘণ্টা ধরে আমাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। দুজনে জানান, চেয়ারম্যান তারেকসহ তাদের মারধর করেছেন শহিদুল খান, হানিফ হাওলাদার, হাসান ডাক্তার, সজল হাওলাদার, রানা জমাদ্দার, সুজন শরীফ, বাদল বিশ্বাস, ফেরদৌস সরদার, মিন্টু খান, মিলন, রানা হাওলাদার, সাবেক ইউপি সদস্য কাইয়ুম হাওলাদার ও মিজান মোল্লা।

সাবেক চেয়ারম্যান তারেক বলেন, তারা বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা কামরুল হাসান হিমুর লোক। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৮ জনের একটি টিম হামলা চালাতে আসে। ধাওয়া করে দুজনকে আটকে মারধর করে উত্তেজিত জনতা। পুলিশ জানতে পেরে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তারেক বলেন, আমাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সোমবার বিকালে আমি বাদী হয়ে মজিদ ও মনুসহ বেশ কয়েকজনের নামোল্লেখপূর্বক বাবুগঞ্জ থানায় একটি এজাহার করেছি। আমার ওপর হামলা চেষ্টার প্রতিবাদে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। তারেক বলেন, এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের চাচাতো ভাই। এজন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে সভাপতি খালেদ হোসেন সরদার স্বপন জয়কে বাবুগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণার কথা বলেছেন।

বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আগরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সরদার তারেকুল ইসলাম তারেক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালিদ হোসেন স্বপনের বাবার হত্যা মামলার আসামি মারধরের শিকার মজিদ সরদার। মজিদ সরদার ও সাবেক চেয়ারম্যান তারেক একই বাড়ির বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন পর মজিদ সরদার গ্রামে ঢুকলে চেয়ারম্যানের অনুসারীরা তাদের আটকে মারধর করেছে। খবর পেয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মারধরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ
© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC