এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-পাঁচলাইশ আংশিক) আসনে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী গণসংযোগে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন চিহ্নিত সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলা (৩৮)। বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর পাঁচলাইশ থানার চালিতাতলী বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল ৪টার দিকে এরশাদ উল্লাহ তাঁর কর্মীদের নিয়ে জনসংযোগে নামলে হঠাৎ অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে এরশাদ উল্লাহর ডান পায়ে ও সঙ্গে থাকা সারোয়ার হোসেন বাবলার বুকে গুলি লাগে। গুরুতর অবস্থায় দুজনকে নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক সারোয়ার বাবলাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গুলিবিদ্ধ এরশাদ উল্লাহ বর্তমানে হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) শাহাবুদ্দিন কোরেশী সমকালকে বলেন, ‘এটি পরিকল্পিত হামলা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্তে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।’
কে এই সরোয়ার হোসেন বাবলাঃ
নিহত সারোয়ার হোসেন বাবলা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের সন্ত্রাস জগতের পরিচিত নাম। তাঁর বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকসহ অন্তত ১৯টি মামলা রয়েছে।
বাবলা ছিলেন চট্টগ্রামের আলোচিত আট ছাত্রলীগ নেতা খুন মামলার অন্যতম আসামি সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বাবলা নিজস্ব গ্রুপ গড়ে তোলেন।
২০১১ সালের জুলাইয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন বাবলা ও তাঁর সহযোগী নুরুন্নবী ম্যাক্সন। সে সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুটি পিস্তল, একটি এলজি ও বিপুল পরিমাণ গুলি।
২০১৭ সালে জামিনে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে যান বাবলা। সেখানে বসেই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন বলে অভিযোগ ছিল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দেশে ফেরার পর ঢাকায় নামার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তাকে আবার আটক করে।
এর আগে, চলতি বছরের ২৭ জুলাই রাতে নগরের অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে বাবলাকে সহযোগী বাবুলসহ গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। পরে আদালত তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।
পুরনো বিরোধের জেরেই হামলা সন্দেহঃ
পুলিশের ধারণা, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও নির্বাচনী মাঠ দখল নিয়ে এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে এই হামলার সূত্রপাত হতে পারে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, “নিহত বাবলা চিহ্নিত অস্ত্রধারী। সে একাধিক মামলার আসামি। ঘটনাটি পুরনো বিরোধ বা নির্বাচনী উত্তেজনা থেকে ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বিএনপি’র শাস্তি দাবীঃ
বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক নূরুল আমিন অভিযোগ করেছেন, “সাবেক স্বৈরাচারী দলের সমর্থিত সন্ত্রাসীরা আমাদের জনসংযোগে গুলি চালিয়েছে। এতে আমাদের প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও হামলাকারীরা পালিয়ে গেছে।
চট্টগ্রামে এরশাদ উল্লাহর গুলিবিদ্ধ হওয়া এবং সারোয়ার হোসেন বাবলার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলার পর চালিতাতলী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
