চট্টগ্রামে উপদেষ্টা ফাওজুলঃ রেলের দূর্নীতি ভয়ংকর

এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ

★ কক্সবাজার মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো শিগগিরই সোজা করা হবে।
★ কালুরঘাট ব্রিজের কাজ এই সরকারের সময়ে ভালো একটা কিছু দৃশ্যমান হবে।

রেলওয়ে খাতে বিগত সময়ে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, প্রকল্প পরিচালক পদ সৃষ্টি করে রেলে দুর্নীতির পথ তৈরি করা হয়েছে। গুরুত্বহীন প্রকল্প নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এসব প্রকল্প মানুষের কোনো উপকারেই আসেনি।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে সড়ক ভবনে সড়ক ও রেল বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন এবং চট্টগ্রাম–দোহাজারী লাইনে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। “আমাদের হাতে এখন পর্যাপ্ত লোকোমোটিভ নেই, কোচ নেই—এসবের পেছনেও দুর্নীতি গেঁথে আছে। আমরা এসব ভুল ও দুর্নীতিগ্রস্ত পথ থেকে সরে আসছি।”

কালুরঘাট সেতুর কাজ চলমানঃ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নদী শাসন করেই নতুন কালুরঘাট সেতুর কাজ এগিয়ে নিতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সময়ে এ প্রকল্পে ভালো একটি অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে বলে আশা করি।” বাংলাদেশের নদী বারবার দিক পরিবর্তন করায় ব্রিজ নির্মাণে বাড়তি সতর্কতা দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করা হবেঃ

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করার কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা। এ প্রকল্পের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

তিনি বলেন, শুধু মহাসড়ক ৮ লেন বা ১০ লেন করলেই যানজট কমে না। পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের কমপক্ষে ২০ শতাংশ রেল ও নৌপথে স্থানান্তর করতে হবে। “রোড, রেললাইন, ইনল্যান্ড ওয়াটার—সব একসঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে মাল্টিমোডাল নীতি অনুসরণ করতে হবে।”

‘ফরমায়েশী’ সড়ক আর হবে নাঃ

বিগত সরকারের সময়ে ‘ফরমায়েশী’ সড়ক নির্মাণের প্রবণতা ছিল বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। উদাহরণ হিসেবে কিশোরগঞ্জের ইটনা–মিঠামইন সড়ক প্রকল্পের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বড় রাস্তা হলো, কিন্তু পরিবেশ, কৃষি, মাছ–সব ধ্বংস হলো। অথচ সেখানে গাড়ি চলে না—শুধু কয়েকটি টেম্পু।”

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত চাহিদা বা ‘নানার বাড়িতে পিঠা খেতে যাওয়া’র মতো যুক্তিতে রাস্তা নির্মাণের দিন শেষ। সড়কের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্বই প্রধান বিবেচ্য হবে।

ব্যয় নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বঃ

মাতারবাড়ি এলাকায় এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়কে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ ধরনের বিশাল ব্যয় জাতি হিসেবে বহন করা কঠিন। যে প্রকল্প আমরা বাস্তবে সামলাতে পারব, কেবল সেটাই করা হবে।”

সীমান্ত সড়ক পরিদর্শনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সীমিত সম্পদ বিবেচনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ জরুরি। “একই টাকা দিয়ে একটি হাসপাতাল করা যায় কি না—সেটাও ভাবতে হবে।”

জমির ব্যবহার নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিঃ

উপদেষ্টা বলেন, “জমিদার মানেই পুকুর, নারকেলগাছ থাকবে—এই চিন্তা বাদ দিতে হবে। এখন জমি বহুমুখীভাবে ব্যবহার করতে হয়। রাস্তার জন্য জমি মানেই পাওয়া যাবে—এমন ধারণাও ভুল।”

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *