তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: চার দশকেরও বেশি সময় ধরে স্বপ্নের একটি সেতুর আশায় অপেক্ষা করছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের নলোয়ারপাড় ও আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ।
মাত্র ৬০ ফুটের একটি সেতুর অভাবে প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যাতায়াত করেন শত শত মানুষ। এর মধ্যেই রয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী—যাদের প্রতিদিনের স্কুলে যাওয়া-আসা নির্ভর করে এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর ওপর।
উদনাছড়া নদী নলোয়ারপাড় এলাকাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। এক পাশে রয়েছে তেলিআব্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুবাগাঁও বাহরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। অন্য পাশে দুর্গানগর, গোলগাল, গাজিপুর, আমরাইলছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। দুই পাশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নদী পারাপার যেন অনিবার্য।
প্রতিদিন শত শত শিশু এই সাঁকো দিয়ে স্কুলে যায়। বর্ষায় সাঁকো পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়ে। প্রায়ই কেউ না কেউ পড়ে আহত হয়, ফলে অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
চার যুগ ধরে এলাকাবাসী সেতুর দাবি জানালেও মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসই শুধু পেয়েছে, বাস্তবে এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি। দাবি জানাতে জানাতে স্থানীয় অনেকেই কৈশোর থেকে বার্ধক্যে পা রেখেছেন। অর্ধশত বছরেও সেতু না হওয়ায় ক্ষোভ জমছে সাধারণ মানুষের মনে।
বর্তমানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার করছেন। সেতু না থাকায় শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, এমনকি রোগী পরিবহনেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও প্রসূতি রোগীদের নেওয়া হয় এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে—এই পথ যেন এক অনিবার্য দুর্ভোগ।
সিন্দুরখাঁন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াছিন আরাফাত রবিন বলেন, “এটি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন। নতুন সরকার গঠনের পর আমরা সেতু নির্মাণের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “মানুষের দুর্ভোগ বিবেচনায় সেতু নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। দ্রুত সময়ের মধ্যে উদনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হবে।”
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা—উদনা নদীর ওপর স্বপ্নের সেই সেতুটি একদিন তৈরি হবে, যা বদলে দেবে তাদের জীবন, শিক্ষা, চলাচল এবং পুরো এলাকার অর্থনৈতিক গতি।
