March 29, 2024, 1:13 am

আনুমানিক ৫শ ব্যক্তি প্রতারিত হয়েছেন, নবাবে’র ঠাঁই কারাগারে

  • Last update: Monday, November 2, 2020

পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার নবাব পরিবারের বংশধর অর্থাৎ নওয়াব সলিমুল্লাহর নাতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া আলী হাসান আসকারির ঠাঁই হলো কারাগারে।

সোমবার ভূয়া নবাব আসকারি ও তার ৫ সহযোগীকে আদালতে পাঠালে, আদালতে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে ঢাকার নবাব পরিবারের বংশধর অর্থাৎ নওয়াব সলিমুলাহর নাতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া নবাব আসকারির প্রতারণা শিকার হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ।

যাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে ভুয়া নবাব ও তার চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন অন্তত ২০ জন ভুক্তভোগী। আসকারি সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নার্স পাঠানোর কথা বলে ফেনীর ৪শ ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আরো কয়েকটি দেশে লোক পাঠিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এসব টাকা হাতিয়ে নেন।

পুলিশের সিটিটিসির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভুয়া নবাব আলী হাসান আসকারি ও তার চক্রের হাতিয়ে নেওয়া ৬ কোটি টাকার খোঁজ করা হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই চক্রের যে দালাল রয়েছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশের সিটিটিসির একজন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আলী হাসান আসকারি ঢাকার নবাব এস্টেটের সম্পত্তির মধ্যে শাহবাগের একটি অংশের মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য ভূমি অফিসে দুটি মিসকেস (৭০৭/২০২০, ৮৯০/২০২০) করেন।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে নবাব এস্টেটের কিছু সম্পত্তির মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য তিনটি মিসকেস (৬৬৬/২০২০, ৬৬৭/২০২০, ৬৬৮/২০২০) করেন। বর্তমানে এসব সম্পত্তি ভূমি সংস্কার বোর্ডের অধীনে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের মাধ্যমে দেখভাল করা হয়। নবাব পরিবারের বংশধর না হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ঢাকার নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করেন।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া নবাব আসকারি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে নিজের নামে নবাব খাজা আলী আহসান আসকারি নামে একটি জন্মনিবন্ধন সনদ নেন। সেই জন্ম নিবন্ধনের ভিত্তিতে তিনি নবাবের বংশধর হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন।

২০১৫ সালে তিনি ঢাকার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে একটি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট দিয়ে তিনি ২০১৭ সালে আবেদন করে নবাব খাজা আলী হাসান আসকারি নামে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আরো জানান, ভুয়া নবাব তার স্ত্রীর নাম-পরিচয়ও বদলে দিয়েছেন প্রতারণার মাধ্যমে। বিশেষ করে ২০০৮ সালে চুয়াডাঙ্গার মেরিনা আক্তার নামে এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি। তবে ২০১৭ সালে তিনি নাম বদলে সাহেদা হেনা আসকারি হিসেবে জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়েছেন।

এ ছাড়া এএসসি ও এইচএসসির সনদেও মেরিনা তার নাম পাল্টে ফেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের কাছে আবেদন করে নতুনভাবে সকল সনদ সংগ্রহ করেছিলেন। তবে কোন ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া কীভাবে বোর্ড পরিবর্তিত নামে মেরিনাকে সনদ দিয়েছিল সে বিষয়টি জানতে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষা বোর্ডে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরো বলেন, নবাবি এস্টেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়, কামরুল হাসান হৃদয় নামে এক প্রতারক ভুয়া ও জাল নথিপত্র দিয়ে নবাবের অনেক সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে।

এখন পুলিশের ধারণা, তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়া আলী হাসান আসকারি প্রতারক কামরুল হাসান হৃদয় হতে পারেন। যদিও পুলিশি রিমান্ডে আসকারি দাবি করেন, তিনি কামরুল হাসান নন। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসকারি যে পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মধ্যে তিনজন তার আপন ভাই রয়েছেন।

তারা হলেন- রাশেদ ওরফে রহমত আলী ওরফে রাজা, মো. আহাম্মদ আলী ও বরকত আলী ওরফে রানা। আবার তিন সহোদর দাবি করছেন, কামরুল হাসান হৃদয় নামে তাদের এক ভাই ছিল, যিনি সৌদি আরবে মারা গেছেন বলে তারা দাবি করেছেন। তবে সৌদি আরবে কবে কীভাবে মারা গেছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি তারা।

পুলিশের ধারণা, গ্রেফতার রাজা, আলী ও রানার বড় ভাই ভুয়া নবাব আলী হাসান আসকারি। তিনিই কামরুল হাসান হৃদয়।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC