তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও মাধবপাশায় জেলা প্রশাসকের ১/১ খতিয়ানের জমিতে বাড়ি নির্মান করে এলজিডি’র রাস্তা ও ছড়া দখলে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় কৃষকলীগের নেতা সহ গ্রামবাসীর উপর চাঁদাবাজির মামলা দিলেন এক নারী রেবেকা সুলতানা ডলি। দখলকৃত বাড়ির জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলামান থাকায় কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না প্রশাসন। এ ব্যাপারে এলাকার উত্তেজনা থামাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ দখলকৃত ভূমির সীমানা নির্ধারন করলেও আদালতে মামলা চলমান থাকায় স্থায়ী কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় মহিলার বাড়ির পাশ দিয়ে গ্রামের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। ঐ রাস্তায় সে বাধাঁ সৃষ্টি করে। আমরা গ্রামের পঞ্চায়েত তাকে অনেকবার বুঝিয়েছি। কারো কথা সে মানেনা। রাত্রের বেলা রাস্তায় বেড়া দেয়। আর সেদিনের ঝগড়ার জন্য রেবেকা সুলতানা ডলি দায়ী। সে গ্রামের মুরুববিদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকলে শিপলু সাহেব গালাগালি না করার জন্য বলেন। তারপরই সে বদরুল আলম শিপলু সাহেবকে আঘাত করে। যাহা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়।
মাধবপাশা গ্রামের সাবেক প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব আবু তাহের ভূইয়া বলেন, ছড়ার উপর গাইড ওয়াল দেওয়ার বিষয় গ্রামবাসী প্রতিবাদ করে। তখন মহিলাটি এসে শিপলুকে খোঁজতে থাকে। এরপর বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে মারতে আসে। এখানে চাঁদাবাজির কোন বিষয় জড়িত নয়।
ভূনবীর ইউনিয়ন ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মো: জালাল উদ্দিন বলেন, রেবেকা সুলতানা ডলি সরকারী জমির উপর বাড়ি করে গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তার বাধাঁ সৃষ্টি করায় ২২ সালে ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলী ও বদরুল আলম শিপলু এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। পরে ঐ মহিলা খুব অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে। একটি মিথ্যা রেপ মামলাও করে। সেটি খারিজ হয়ে যায়। আমি ২০০১ সাল থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ৮নং ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলাম। বদরুল আলম শিপলুর উপর রেবেকা সুলতানার ডলির করা অভিযোগটি সম্পুর্ন মিথ্যা।
বদরুল আলম শিপলু বলেন, গ্রামে প্রবেশের মুখ এই রাস্তাটি। ১৯৭৩ সালে আমার বাবা মৃত: আলতাফুর রহমান এলাকার প্রথম মেম্বার নির্বাচিত হয়ে এই রাস্তাটি গ্রাম বাসির জন্য করেন। রেবেকা সুলতানা ১/১ খতিয়ানের ২০৮ দাগের জমি দখল করে বাড়ি করেছে। তার এই বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ অন্য জমির পর্সা দিয়ে নিয়েছে। তার উপর সরকারী ভূমি দখলের বিষয় উপজেলা পরিষদে রেজুল্যাশন করা আছে। এখন সে আমার উপর চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ এনেছে।
ভূনবীর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডর মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, রেবেকা সুলতানা ডলির দখলকৃত ২০৮ দাগ ১/১ খতিয়ানের,১০শতক ভূমি। এই ভূমির বিষয় ২২ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরে ৭ দিনের মধ্যে কাগজ পত্র নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে সময় তারা কাগজ পত্র নিয়ে হাজির হয়নি। এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বিগনকে রেবেকা সুলতানা চাঁদা,সন্ত্রাসী বাজ বলে। অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে। এই মহিলা পুরুষ নির্যাতন করছে। আইনশৃঙ্খলা মিটিংএ আমি বিষয়টি আলোচনা করবো।
শ্রীমঙ্গল সহকারী কমিশনার( ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার বলেন, রেবেকা সুলতানার বাড়ির পেছনের ছড়ার সীমানা নির্ধারন করে গিয়েছেন। তবে বাড়িটি সরকারী ভূমি কি না তা কাগজ পত্রের মাধ্যমে আদালতে প্রমান হবে।
এব্যাপারে রেবেকা সুলতানা বলেন, আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার ভাই আমাকে ফোন করে জানায়, ছড়ার পাড়ে ওয়াল নির্মানের কাজ বদরুল আলম শিপলু, আবু তাহের মাস্টার, জালাল উদ্দীন সেলিম, জাহাঙ্গীর সহ এলাকার বেশ কয়েকজন মুরুব্বি কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ আসে। পুলিশ কাজ শুরু করে চলে যাওয়ার পর ওরা আবার কাজ বন্ধ করে দেয়। বদরুল আলম শিপলুসহ এলাকার সবাই ৫ লাখ, ৩লাখ, ২লাখ টাকা চাঁদা চায়। ওরা আমাকে মারধোর করে। চাঁদা চাওয়ার সময় কে কে ছিল জানতে চাইলে বলেন, তার ভাই বদরুজ্জামান ও ঠিকাদার সানু মিয়া ছিল। তাকে মারধোর করার সময় এলাকার অনেক মানুষ রক্ষা করে। অতচ এই সময় চাঁদা চাওযার সময় মাত্র এ দুই ব্যাক্তি ছিল জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে উঠেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় বলেন, মাধবপাশা গ্রামের বদরুল আলম শিপলু সহ এলাকাবাসির এর সাথে ছড়া দখল নিয়ে রেবেকা সুলতানার ঝগড়া হয়। এর প্রেক্ষিতে আমরা এখানে আসি। ছড়ার পাড়ের সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছি। সেই মোতাবেক সাইড ওয়াল নির্মান করবেন। তবে এখন স্তিতা অবস্থা থাকবে।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভুষন রায় বলেন, এলাকার জমি জমা সংক্রান্ত বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আমি সহ মিমাংসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সমাধান করতে পারিনি। আর চাঁদাবাজির বিষয় এটি মিথ্যা, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন ভাবে প্রমান পাইনি এ চাঁদাবাজির বিষয়টি।