চিত্রনায়িকা পরীমনি ‘বিশেষ সঙ্গ’ ও বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতেন। আর তাকে সহযোগিতা করতেন কথিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। তিনি প্রথমে পরীমনিকে কোটিপতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। রাজের সঙ্গে মিশু হাসান ও জিসান মিলে ১০ থেকে ১২ জন তরুণী নিয়ে একটি সিন্ডিকেট চালাতেন। উচ্চবিত্ত ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ‘বিশেষ সঙ্গ’ দিয়ে এইসব তরুণীরা অর্থ আয় করতেন। এই চক্রের তরুণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘চাহিদা’ ছিল পরীমনির। তিনি বিদেশে গিয়েও ‘প্লেজার ট্রিপ’ দিতেন।
চিত্রনায়িকা পরীমনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই র্যাবকে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, পরীমনির বাসায় একটা মিনি বার রয়েছে। তিনি বাসায় মাঝে মধ্যেই পার্টির আয়োজন করতেন। এখানে বিভিন্ন ব্যক্তিরা আসতেন। তার এই কাজে সহযোগিতা করতেন নজরুল ইসলাম রাজ। এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরীমনি ২০১৪ সালে শোবিজ মিডিয়ায় যুক্ত হন। গত সাত বছরে তিনি ৩০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যেই তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের চেয়ে নিয়মিত বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নেওয়ার নেশা ছিল তার। এছাড়া চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশের পর থেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। নিয়মিত বিভিন্ন পার্টিতে গিয়ে মদ পান করতেন। এসব পার্টিতে শিল্পতিদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে সখ্যতা গড়ে তুলতেন। এরপর দেশের বাইরে বিশেষ করে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে শিল্পপতিদের ‘এসকর্ট’ হিসেবেও কাজ করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি জানিয়েছেন, তার ব্যবহার করা গাড়িটি একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা কিনে দিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। করোনার মধ্যেই ওই ব্যক্তির সঙ্গে দুবাই ভ্রমণে যান তিনি। এছাড়া বিদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে পরীমণিকে যোগসূত্র তৈরি করে দিতেন তুহিন সিদ্দিকী অমি।
র্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারের পর পরীমনির মোবাইল ফোনটি তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন। সেখানে অনেক ভিআইপি ব্যক্তি ও শিল্পপতিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও বিশেষ সম্পর্ক থাকার অনেক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। অনেকের সঙ্গে তার নিয়মিত কথপোকথনের প্রমাণও পাওয়া গেছে। এসব ব্যক্তিরা সমাজের উঁচুস্তরের ব্যক্তিবর্গ। তাদের বিষয়েও খোঁজ-খবর করা হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরীমনির সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া অনেক রাজনীতিকের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তার। আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক সন্ত্রাসীর সঙ্গেও অর্থের বিনিময়ে ‘বিশেষ সঙ্গ’ দিয়ে অর্থ আয় করেছেন তিনি। একটি সূত্র জানায়, প্রবীণ এক রাজনীতিকের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন তিনি। কথিত প্রযোজক নজরুল রাজ তাকে ওই রাজনীতিকের বাসায় নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, পরীমনি ও রাজের বিষয়ে আমরা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, পরীমনি ও রাজের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা দুটি তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবে র্যাব।
সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়