March 21, 2023, 5:52 pm

গ্যাস অনুসন্ধানে বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কে এলাকাবাসী

  • Last update: Saturday, December 24, 2022

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গ্রামের মধ্যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। ড্রিলিংয়ের পর মাটির ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরে এই বিস্ফোরণ ঘটানোর কারণে পাকা ও আধা পাকা বসতবাড়িতে বার বার কম্পন হচ্ছে। এতে শিশু ও অসুস্থরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বিস্ফোরণে টিউবওয়েল, পাকা দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। চা শ্রমিকদের পুরনো ঘরে ফাটল দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা গ্রাম থেকে গত দু’দিন যাবত বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিএনপিসি)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ৫শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সার্ভে, ড্রিলিং ও রেকর্ডিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে বিজিপি, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জে, বসতবাড়ির আঙ্গিনায়ও ড্রিলিং করে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এতে অসুস্থ রোগী ও শিশুরা ভয়ে আতঙ্কিত হচ্ছে। এছাড়াও ফসলি জমি বিনষ্ট, মাটি ধ্বস, পাকা দেয়ালে ফাটল, টিউবওয়েলে পানি উঠতে সমস্যা, পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি সহ সর্বোপরি ভূমিকম্পের সময়ে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

Advertisements

দেওছড়া চা বাগানের রাজু গোড় বলেন, বিস্ফোরণের কারণে আমার ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এভাবে চা বাগানে আরও অনেক শ্রমিকের দেয়ালে ফাটল দিচ্ছে। শ্রীসূর্য্য গ্রামের সমাজকর্মী ফটিকুল ইসলাম, ধূপাটিলা গ্রামের সায়েদ মিয়া, আক্তার মিয়া, শেরওয়ান আলী, আতিকুর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তারা দল বেঁধে কাজের কারণে জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। এখন বাড়িঘরের আশেপাশে যে হারে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে তাতে আতঙ্কে থাকতে হয়। আর শিশু ও অসুস্থ লোকজনের জন্য আরো বেশি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বাড়িঘরের আশেপাশে এভাবে অজস্র বিস্ফোরণের কারণে ঘরের পাকা দেয়ালে ফাটল দেখা দিতে পারে। টিউবওয়েলেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ভূমিকম্পে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এভাবে গ্রামের ভেতরে অব্যাহত বিস্ফোরণ মোটেও উচিত হয়নি বলে তারা দাবি করেন।

পরিবেশ কর্মী নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, বসতবাড়ির সন্নিকটে যে হারে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে তাতে শুধু ঘরবাড়িরই ক্ষতি হবে না, এটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতির কারণ। দিনে দু’তিনশ’ বিস্ফোরণ হচ্ছে। এতে মাটির স্তর পরিবর্তন, পানি দূষণ, টিউবওয়েলে সমস্যা, বন্যা ও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি ও মাটি ধ্বসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। সর্বোপরি পরিবেশ, প্রতিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। এধরণের কার্যক্রমে প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বসতবাড়ি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে সার্ভে করা উচিত ছিল।
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এর পাবলিক রিলেশন অফিসার ইমাম হোসেন এর সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে আমাদের সার্ভে কাজ চলমান রয়েছে। কাজের জন্য বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি সাপেক্ষে সার্ভে ও ড্রিলিং কাজ চলছে। মৌলভীবাজারের ২০টিসহ সারাদেশে ৪৯টি চা বাগানে কাজ করারও অনুমতি রয়েছে। তবে এসব কাজের জন্য ফসলের কিংবা বাড়িঘরে কোন ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।

Advertisements

উপজেলার পতনউষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, গ্যাস কোম্পানীর লোকজন আমাদেরকে বলেছে কেউ কোন রকম ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে তারা সার্ভে শুরু করেছে। তবে বসতবাড়ি থেকে কমপক্ষে তারা ৮০ মিটার দূরত্বে বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা বলেছে। এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা ক্ষতিপূরণ প্রদান করার কথা রয়েছে বলে তিনি জানান।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ
© 2022 | Bangla Express | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC